স্বদেশ ডেস্ক:
২৭ বছর পর আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পেতে যাচ্ছে ছাত্রদল। সবশেষ ১৯৯২ সালে পঞ্চম কাউন্সিলে সরাসরি ভোটে রুহুল কবির রিজভী ও এম ইলিয়াস আলী যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর পরের সবগুলো কমিটিই ছিল ‘পকেট কমিটি’।
ছাত্রদলসংশ্লিষ্ট নেতাদের অভিযোগ, বিগত সময়ে এভাবে পকেট কমিটি করায় ছাত্রদলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিকাশ ঘটেনি। ‘বিশেষ সিন্ডিকেটে’র কাছে বন্দি হয়ে যায় সংগঠনটি। যা ধরা পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময়। ছাত্রদলের অভিভাবক হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ঘটনায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ হন। এর পরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন কমিটি পকেট নয়, কাউন্সিলরদের ভোটেই নির্বাচিত হবে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
এ অবস্থায় বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচনের কাউন্সিল করতে পুনঃতফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোটগ্রহণ হবে। ছাত্রদলের ষষ্ঠ কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গত মঙ্গলবার এ কথা জানানো হয়।
এর আগে নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে ১৫ জুলাই ভোটের তারিখ ঠিক করা হয়েছিল। ২০০০ সালের আগে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন এমন কেউ ছাত্রদলের কাউন্সিলে প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু বয়সসীমা নিয়ে সংগঠনের একটি অংশের আন্দোলনে কাউন্সিল পিছিয়ে যায়। এ ঘটনায় আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির ১২ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে স্কাইপের মাধ্যমে মতবিনিময় করে পরিস্থিতি শান্ত করেন। মূলত সমাধানের পথ বের করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায় ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। বিএনপির এক নেতা বলেন, সমাধান না হলে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট আবারও পকেট কমিটি করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারেক রহমানের দৃঢ় মনোভাবের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
এদিকে পুনঃতফসিল ঘোষণার সঙ্গে ১২ নেতার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের কথা ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা রয়েছে। এ বিষয়ে তারেক রহমান আন্দোলনকারীদের তার ওপর আস্থা রাখতে বলেছেন। কারও কারও ধারণা, বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার বিলম্বিত করার মাধ্যমে তারেক রহমান তাদের ধৈর্য্যরে পরীক্ষা নিচ্ছেন।
১৯৮০ সালে ছাত্রদলের প্রথম কাউন্সিলে এনামুল কবির শহীদ সভাপতি ও গোলাম হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে দ্বিতীয় কাউন্সিলে গোলাম সারোয়ার মিলন সভাপতি ও আবুল কাশেম চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮৩ সালে আবুল কাশেম চৌধুরী সভাপতি ও জালাল আহমেদ সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮৬ সালে জালাল আহমেদ সভাপতি ও মাহবুবুল হক বাবলু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
পুনঃতফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বিতরণ ১৭-১৮ আগস্ট, জমা ১৯-২০ আগস্ট। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৩১ আগস্ট। ২২-২৬ আগস্ট যাচাই-বাছাই শেষে ২ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ। ১২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ভোটের জন্য প্রচার চালাতে পারবেন। এ নির্বাচন পরিচালনার জন্য ছাত্রদলের সাবেক নেতা খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বাছাই কমিটি এবং শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল কমিটি গঠন করেছে বিএনপি।
পুনঃতফসিল ঘোষণার পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী নেতারা জেলায় জেলায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ তো আছেই। শুধু ভোটারই নয়, সংশ্লিষ্ট জেলা-মহানগর এলাকার প্রভাবশালী বিএনপি নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন তারা। তবে ‘বিশেষ সিন্ডিকেট’ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিতে প্যানেল করার কাজেও নেমে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ জন্য ওই সিন্ডিকেট প্রচুর অর্থ খরচ করতেও প্রস্তুত রয়েছে বলে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাদের সূত্রে জানা গেছে।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী যারা : সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বিলুপ্ত কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল আলম টিটু, জাকির হোসেন, সহ-তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মামুন খান, বৃত্তি ও ছাত্র কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মুক্তিযুদ্ধ গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম সাগর, স্কুলবিষয়ক সম্পাদক আরাফাত বিল্লাহ, সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল আলম ফকির লিঙ্কন, কৃষি ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক মো. সানোয়ার আলম, নির্বাহী কমিটির সদস্য ওমর ফারুক শাকিল চৌধুরী মোহাম্মদ এরশাদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, সিনিয়র সহ-সভাপতি তানভীর রেজা রুবেল, সহ-সভাপতি আমিনুর রহমান আমিন, সাজিদ হাসান বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নেওয়াজ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, তানজিল হাসান, ইকবাল হোসেন শ্যামল, রিজভী আহমেদ ও সহ-সাধারণ সম্পাদক মুতাছিম বিল্লাহ।
সভাপতি পদপ্রার্থী আসাদুল আলম টিটু বলেন, পরীক্ষিতরাই ভোটের মাধ্যমে নেতা হবেন বলে প্রত্যাশা করছি। আরেক সভাপতি প্রার্থী মামুন খান বলেন, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ঢাকার রাজপথে কার্যত এবং দৃশ্যমান আন্দোলনের সূচনা করতে চাই। যে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রীর মুক্তির পাশাপাশি আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্বিঘেœ দেশে ফিরে আসতে পারেন। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শাহ নেওয়াজ বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটের মাধ্যমে কাউন্সিলররা যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে আশা করছি।
আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, আমাদের প্রিয় নেতা তারেক রহমান আসন্ন কাউন্সিলের মাধ্যমে তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রের একটি যোগসূত্র স্থাপন করেছেন। এতে আগামী কমিটিতে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলা সম্ভব হবে।